মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসা গ্যাসে জ্বলছে আগুন।
জাহিদ চৌধুরী,মানিকগঞ্জ.
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের একটি খেতের মাটির নিচ থেকে কয়েকদিন ধরে বের হচ্ছে গ্যাস । এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল। আশপাশের এলাকার উৎসুক জনতা প্রতিদিন ভিড় করছেন সেখানে ।
চলতি বোরো মৌসুমে সেচযন্ত্র স্থাপনের জন্য মাটির তলদেশে পাইপ স্থাপনের সময় এই গ্যাস নিঃসরণ হতে দেখতে পান জমির মালিক। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা বর্ধমানকান্দি গ্রাম। এ গ্রামের একটি ভুট্টাখেতে সেচযন্ত্রের জন্য স্থাপিত লোহার পাইপের পাশে মাটির ভেতর থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। উৎসুক লোকজন মাটিতে সরু পাইপ বসিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই পাইপের ওপরের অংশে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে আগুন।
জমির মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে সেচযন্ত্র স্থাপনের জন্য বোরিং করান (মাটির গভীরে লোহার পাইপ স্থাপন) জমির মালিক রাসেল প্রধান ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস প্রধান। মাটির গভীরে লোহার পাইপ প্রতিস্থাপনের সময় এই গ্যাস নিঃসরণ দেখতে পান তাঁরা। এরপর মাটিতে সরু পাইপ স্থাপন করে পাইপের ওপরে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই আগুন জ্বলতে থাকে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়।
জমির মালিক ইদ্রিস প্রধান বলেন, জমিটিতে তাঁরা ভুট্টার আবাদ করেছেন। জমির এক পাশে সেচযন্ত্র স্থাপনের জন্য বোরিং করার সময় পানিতে বুদ্বুদ দেখা যায়। বোরিং শেষে পাশে মাটিতে ছোট একটি পাইপ প্রবেশ করিয়ে আগুন জ্বালালে পাইপের ওপর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ১০ দিন ধরে এভাবেই গ্যাস বের হচ্ছে।
দিন দিন গ্যাসের চাপ বাড়ছে জানিয়ে স্থানীয় শফিকুল ইসলাম বলেন, মাটির ভেতর থেকে গ্যাস নিঃসরণ দেখতে আশপাশের লোকজনও সেখানে আসছেন। ঘটনাস্থলের পাশেই থাকা তরিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন গ্যাসের চাপ বাড়ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তাঁরা।
গ্যাস বের হওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান, শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর-এ আলম ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, মাটি থেকে গ্যাস নিঃসরণের বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার জেলা প্রশাসক লিখিত এক পত্রে গ্যাস নিঃসরণের বিষয়টি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবকে জানান। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিঃসরণ হওয়া গ্যাসের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সচিবকে একটি কারিগরি দল পাঠাতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। পাশাপাশি ওই এলাকার নিরাপত্তায় ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বাপেক্সের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে এসে গ্যাস নিঃসরণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ বলেন, ‘গ্যাসের চাপ কম এবং গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয়েছে। বায়ুজনিত গ্যাস হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নমুনা নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো পরিস্থিতি নেই, কারণ চাপ কম। আশপাশের অগভীর নলকূপগুলোতে কোনো গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে না বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি।’
Leave a Reply