টঙ্গীতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
আপডেট সময় :
শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩
গাজীপুরের তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি)বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থী) মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। শুক্রবার বাদ ফজর মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসছেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাকে, আবার কেউ পিকআপ ভ্যানে চড়ে এসেছেন ইজতেমা মাঠে। সবার হতেই একাধিক ব্যাগ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। মুসল্লিরা মাঠে ঢুকছেন ভিন্ন ভিন্ন ফটক দিয়ে। মাঠে ঢুকেই নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত জায়গা) অবস্থান নিচ্ছেন মুসল্লিরা।ইজতেমায় মুসল্লিদের ভিড়, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই লাখ লাখ মুসল্লিরা ময়দানে এসে নিজ নিজ খিত্তায় অংশ নিয়েছেন। যারা খিত্তায় স্থান পাননি তারা বাধ্য হয়ে ময়দানের বাউন্ডারির বাইরে চারপাশের খালি জায়গায় ইস্তেমীয় সিমানা নিয়ে বসে পড়েছেন।
মুসল্লিরা জানায়, বুধবার রাতে ময়দানে গিয়ে দেখি পুরো খিত্তায় মুসল্লিতে ঠাসা। খিত্তায় জায়গা না পেয়ে ময়দানের বাইরে অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করে যাচ্ছি।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসেছেন ২৮ দেশের বিদেশী মুসল্লি বুধবার দুপুর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৮ দেশের এক হাজার ৪৬১ জন বিদেশি মেহমান ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম। ভারতের এক হাজার ১২৩ জন, পাকিস্তানের ৮২ জন, মিয়ানমারের ১৬ জন ও আফগানিস্তানের ৮ জন বিদেশি মুসল্লি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন।
ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বৃহস্পতিবার থেকেই দু’পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র্যাব, কিউআরটি, আনসারসহ সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ১০ হাজার অধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের করা হয়েছে। ১৩টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো।
এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগলস, পুলিশ ও র্যাবের ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসল্লিদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং এর জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম: ইজতেমায় আগত দেশী-বিদেশি মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে তোরণ, নিরাপত্তার জন্য র্যাব ও পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার, ৩১টি শৌচাগারে ৮ হাজার ৮’শ ৮৪টি টয়লেট ও ২৯৪টি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে। ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহসহ ইজতেমা চলাকালে গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে।
পানির ব্যবস্থা: ময়দানে আগত মুসল্লিদের ওজু গোসলসহ অন্যান্য কাজে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। সেজন্য পূর্বের স্থাপন করা ১৪টি গভীর নলকূপের পাশাপাশি এবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ময়দানে নতুন করে ১ হাজার ফুট গভীর ২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
গ্যাস সংযোগ: ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে ১৪০ থেকে ১৫০ পিএসআই উচ্চচাপ সম্পন্ন গ্যাসের লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শুধু বিদেশি মেহমানদের রান্নার কাজ হয়ে থাকে।
ময়দান জুড়ে প্রায় ৫শ মাইক: আগত মুসল্লিরা যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে শীর্ষ মুরব্বিদের বয়ান শুনতে পারেন সেজন্য শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক ৩২০টি ছাতা মাইক এবং বিদেশি মেহমানদের বয়ান শোনার জন্য বিদেশি কামরা ও তার আশপাশে ২০০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইন স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের মাইকের জামাতের শীর্ষ জিম্মাদার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
ভাসমান পন্টুন সেতু: ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা টঙ্গী-কামারপাড়া ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী সংযোগ ব্রিজ পর্যন্ত তুরাগ নদে ৫টি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করেছেন। পন্টুন সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আগত মুসল্লিরা সহজে তুরাগ নদ পারাপার হতে পারবেন।
ফায়ার সার্ভিস: ইজতেমাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। টু-হেলার মোটর সাইকেল টহল, ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট, মোবাইল জেনারেটর ও প্রতি খিত্তায় ২জন ফায়ারম্যান থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এ্যাম্বুলেন্স, অগ্নি নির্বাপণ গাড়ী, পানিবাহী গাড়ী, ডুবুরি ইউনিট, রেসকিউ বোর্ড, রেসকিউ গাড়ী থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ ৩৬১ কর্মী সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ইজতেমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা: ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব স্ব স্থানে ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। ডেসকোর প্রায় ২শতাধিক কর্মী পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা কর্মরত থাকবেন।
Leave a Reply