নাগরিক জীবনে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে যান্ত্রিক কারণে। চার দেয়ালে আটকে যাচ্ছে আবেগ-অনুভূতি। কমে যাচ্ছে প্রাণিপ্রেম। সেই সময়ে জীবে প্রেমের নিদর্শন দেখিয়ে এক ভিন্নধর্মী আয়োজন করে ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘ক্যাট/পারসিয়ান ক্যাট সোসাইটি অব বরিশাল’।
সেখানে প্রদর্শন হয় ৫০-এর বেশি দেশি-বিদেশি বিড়াল। ক্যাট শোতে আদুরে প্রাণীগুলোকে বিভিন্ন সাজে সাজিয়ে নিয়ে আসেন তরুণ-তরুণীরা। তাদের মধ্যে চলে সাত ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা। সৌন্দর্যের মানদণ্ডে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণের জন্য বিড়ালদের নামতে হয় প্রতিযোগিতায়। নির্ধারণ করা হয় চ্যাম্পিয়ন। ‘র্যাম্প শো’ ছিল নতুন মাত্রার আকর্ষণ।
নামের কারণে বড় চমক হয়ে ওঠে তিন বিড়াল। তাদের নাম ছিল ঢালিউডের তিন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নামে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সাকিব, অপু ও বুবলী নামের তিন বিড়াল হয়ে ওঠে সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাদের দেখতে ভিড় জমায় উপস্থিত সবাই।
শুক্রবার রাতে বরিশালের বাঁধ রোডের একটি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হয় এই অনবদ্য ‘ক্যাট শো’। আয়োজকরা বলছেন, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি মানুষ নিজের মানসিক প্রশান্তির উদ্দেশ্যে পালন করছে শখের প্রাণী। যাদের মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবিক গুণাবলি প্রকাশ পাচ্ছে। মানুষের এই প্রশান্তির ধারক ও বাহকের মধ্যে বিড়াল অন্যতম।
আয়োজকরা বিনা মূল্যে বিড়ালের ভেটেরিনারি চিকিৎসাসেবা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করে। প্রতিযোগিতা ছাড়াও এ আয়োজনে ছিল বিড়াল পালনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান। ব্যতিক্রম আয়োজনকে ঘিরে অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় প্রাণিপ্রেমীদের মিলনমেলায়।
বিড়াল প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে বিজয়ী কাজী নুসরাত জাহান লিমন বলেন, ‘প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ভালো লাগছে। প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়িয়েছে এই আয়োজন। ’
ব্যতিক্রম আয়োজনের প্রশংসা করে মো. নাদিম নামে আরো একজন বলেন, ‘এমন আয়োজন বরিশালের জন্য নতুন একটা মাইলফলক। ’
বিড়াল মালিকদের পাশাপাশি শোটিতে ছিল দর্শনার্থীদেরও উপস্থিতি। তারাও এই ব্যতিক্রমী শো-তে উপস্থিত থাকতে পেরে বেজায় খুশি। দর্শনার্থী তানজিলা আক্তার বললেন, ‘ব্যতিক্রমী এই শো আমার জীবনে প্রথম দেখা। এখানে অনেক বিড়ালকেই সাজগোছ করে নিয়ে আসা হয়েছে। ’
আয়োজক ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন আবির বিন মিজান জানান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ পোষা প্রাণী সম্পর্কে জেনেছে এবং মানুষের মধ্যে বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। পরে প্রদর্শনীটি আরো বড় আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। আয়োজনে অংশ নেওয়া ১৫টির বেশি বিড়ালের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এখন থেকে প্রতিবছর এমন আয়োজন করা হবে। ২০১৯ সালে যাত্রা করা গ্রুপটিতে এখন সাড়ে চার হাজারের মতো সদস্য আছে বলে জানান তিনি।
ক্যাট শোর বিচারক পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ড. দীবেন্দ্যু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘পোষা প্রাণীদের যত্নের কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া মানুষের মানসিক ও শারীরিক- দুই দিক থেকে স্বস্তি দরকার। সেখান থেকে বিড়াল যারা পছন্দ করে, তারা বিড়াল পালন করে মানসিক শান্তি পায়। ’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম বলেন, ‘নাগরিক জীবনে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি বিভিন্ন যান্ত্রিক কারণে। সেই সময়ে জীবে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে এই আয়োজন মানুষকে প্রাণীদের প্রতি আরো সদয় করবে। ’
Leave a Reply