মানিকগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতন; থানায় মামলা
আপডেট সময় :
বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২
ছবিঃ অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সফিক ও ছাত্রলীগনেতা আতাউর রহমান ।
নিজস্ব প্রতিনিধি.
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ।
আহত সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক অধিকার পত্রিকার মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ রফিক খান এবং দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি খাব্বাব হোসেন ত্বহা।
এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকের ভ্রাতা দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সুজন বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায় দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার(১ নভেম্বর) দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার চক মিরপুর ইউনিয়নের চক খরিচরণ এলাকায় সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ঘটনাস্থলেই হামলার শিকার হন তারা। চকমিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম(শফিক) তার অনুসারীদের নিয়ে অতর্কিত এই হামলা চালায়।
এঘটনায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তাদের কেউই গ্রেফতার হয়নি।
মামলার এজাহার সূত্র জানা গেছে, উপজেলার চকমিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তার সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মিয়া, বিএনপি নেতা এবং ভূমিদস্যু মো, রফিকসহ অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জন্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধরক মারধর করে। একপর্যায়ে টেনে হিছড়ে বাজার সংলগ্ন একটি ভবনের পৃথক দুটি রুমে নিয়ে আটক করে প্রাণ নাশের ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়ার চেষ্টা করে ইউপি চেয়ারম্যান শফিক এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক আতাউর রহমান।
ঘটনার বর্ণনা জানিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মোঃ রফিক খান বলেন, ঘন্টাব্যাপী আমার উপর চলে শারিরিক নির্যাতন, ধারণ করা হয় এসব ভিডিও।চাও্য়া হয় চাঁদাবাজের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। অস্বীকৃতি জানালে বদ্ধ ঘরে চলে বেধরক নির্যাতন যা ইউপি চেয়ারম্যানের সামনেই হচ্ছিল। এসময় আমার সাথে থাকা মুঠোফোন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় চেয়াম্যানের লোকজন। মুছে ফেলা হয় সকল তথ্য। মুঠোফোন ফেরত পেলেও ব্যবহৃত ক্যামেরাটি ফেরত পাইনি।আমার মাথার বাম পাশে ফেটে গেছে এবং বাম হাতের কুনুয়ের নিচের হাড় ফেটে গেছে ।এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও নীলাফুলা যখম হয়েছে।”
এবিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত সফিক চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয় অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, “আমি ঘটনার শেষে সেখানে যাই। সফিক চেয়ারম্যানসহ সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের অবস্থার অবনতি দেখে আমি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমি এই ঘটনার সাথে জরিত না বরং সাংবাদিকদের সহযোগীতা করেছি।”
এঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দৌলতপুর উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রাজা বলেন, “অন্যায়কারি যেই হোক আইন তার গতিতে চলবে। এঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবী করি।”
এখনো পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার নেই জানিয়ে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরজাহান লাবনী বলেন, “ আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে ।”
এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, সাধারন সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ । দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ শাস্তির দাবী করেন তারা।
Leave a Reply