1. admin@deshprokash24.com : Admin : Asraful Islam
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মাওলানা মামুনুল হকসহ সকল মজলুম কারাবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জে মাদক উদ্ধার অভিযানে হামলার শিকার ডিবি; আটক ২ মানিকগঞ্জে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে অনিহা ও জুতা পায়ে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী আজ মানিকগঞ্জে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার হেরোইনসহ আটক ৩ মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি মেজবা, সম্পাদক বাহার মানিকগঞ্জে নীতিমালা উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ স্ত্রীর করা মামলায় কারাগারে স্বামী শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ মানিকগঞ্জে মাটির নিচ থেকে বের হচ্ছে গ্যাস

মুসলিম নারী-পুরুষের পোশাক

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

তাজুল ইসলাম.

জন্মগতভাবে মানুষ বস্ত্র পরিহিত হয়ে দুনিয়াতে আসে না; কিন্তু মানুষের স্বভাব, ফিতরত ও প্রকৃতি নগ্নতা ও বস্ত্রহীনতাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই ধীরে ধীরে সেই বস্ত্রহীন শিশু বস্ত্রের আবরণে ঢাকা পড়ে যায়। বাড়ন্ত বয়স মানুষের কাছে নগ্নতা ও বস্ত্রহীনতাকে নেতিবাচক ও নিন্দনীয় করে তোলে। আবরণ ও আচ্ছাদন দিয়ে মানুষ নিজেকে ঢেকে রাখার তাগিদ অনুভব করেছিল সে আদিম আমলেই।

কোরআনের ভাষ্য দেখুন—‘অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষফলের স্বাদ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজেদের আবৃত করতে লাগল। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২২)

লজ্জাশীলতা ও নগ্নতাকে ঢেকে ফেলার এই প্রবণতা মানুষের মজ্জাগত বলেই আদিম থেকে আধুনিক সব যুগেই পোশাক পরিধানকে সভ্যতার অংশবিশেষ ভাবা হয়। হাল আমলের আমাজন জঙ্গলের গুহাবাসী মানুষদেরও দেখা যায় লতাপাতা কিংবা পশুর চামড়া দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতে। এভাবেই পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সভ্যতা, শালীনতা ও ধার্মিকতা।

বাঙালির পোশাক সংস্কৃতি

হাজার বছরের বাঙালির পোশাক সংস্কৃতি কী ছিল, একজন সেক্যুলার বাঙালি গবেষক ড. গোলাম মুরশিদের ভাষায় শুনুন—‘মুকুন্দরামের লেখা থেকে জানা যায় যে তাঁর আমলের অর্থাত্ ষোলো শতকের শেষ দিকের সচ্ছল মুসলমানরা ইজার অথবা পায়জামা পরতেন। ধর্মমঙ্গলে লাউসেনকেও ইজার পরতে দেখা যায়। তা ছাড়া ধর্মমঙ্গলে মুসলমানদের লম্বা জামা এবং পাগড়ি পরার কথা লেখা হয়েছে। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ, অবসর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৬৬)

তিনি আরো লিখেছেন, ‘সতেরো শতকের শাহনামার পাণ্ডুলিপিচিত্রে সবারই মাথা ঢাকা দেখা যায়। আঠারো শতকের যেসব ছবি পাওয়া গেছে, তা থেকেও প্রায় সবার মাথায় বস্ত্র দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৪৬৪)

উনিশ শতক সম্পর্কে তিনি লিখেন, ‘ইংরেজদের আগমন সত্ত্বেও উনিশ শতকের প্রথম কয়েক দশকে পোশাকে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সেকালের সবচেয়ে অভিজাত এবং নেতৃস্থানীয় লোকদেরও লম্বা কোর্তা, চাপকান, জুব্বা এবং মাথায় হয় পাগড়ি নয়তো টুপি ছিল। এটাই ছিল অভিজাতদের ভদ্র পোশাক। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৪৬৯)

ইংরেজ আমল নিয়ে তিনি লিখেছেন, ইংরেজ আমলেও পোশাকের প্রতি সমাজের যে রক্ষণশীতা থাকে, তার জন্য পাশ্চাত্য পোশাক বাঙালি সমাজে ঢুকতে পারেনি। মেয়েদের ব্যাপারে এই রক্ষণশীলতার মাত্রা আরো বেশি ছিল। বিশ শতকের শেষেও নারী এবং পুরুষদের পোশাক তুলনা করলেও নারীদের পোশাকে রক্ষণশীলতা দেখা যায়। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৪৭০)

সাবেক সচিব এ জেড এম শামসুল আলম লিখেছেন, ‘বাঙালি মুসলিম ভদ্র শ্রেণির অতীতের পোশাক ছিল পায়জামা, পাঞ্জাবি। সাধারণ মানুষের পোশাক ছিল লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি আর মুসলিম মেয়েরা ওড়না বা বোরকা জাতীয় অতিরিক্ত বস্ত্রে তাদের দেহ, বিশেষ করে বক্ষদেশ ঢেকে রাখতে চেষ্টা করেন। ’ (বাঙালি সংস্কৃতি, এ জেড এম শামসুল আলম, মুহাম্মদ ব্রাদার্স, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৭)

সুতরাং বর্তমানে শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত বাঙালি নারী-পুরুষের যে পোশাক দেখা যায়, তা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

বাঙালির পোশাক সংস্কৃতির বিবর্তনধারা

ইংরেজ বেনিয়াদের অধীনতার শিকল-বেড়ি থেকে বাঙালি এখন মুক্ত; কিন্তু তাদের শোষণ, শাসন ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের অংশ হিসেবে তারা পূর্বঘোষণা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের চেতনা ও সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে বাঙালির জীবনে-মননে। বাঙালির জাগতিক ও আর্থিক অনগ্রসরতাকে কাজে লাগিয়ে তারা সে ঘোষণা অনুসারে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করে, যার মাধ্যমে এমন এক সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে, যারা রক্তে, বর্ণে হিন্দুস্তানি, কিন্তু চিন্তা-চেতনা, ভাষা ও মানসিকতায় ইংরেজ। নারীবাদী লেখিকা মালেকা বেগম মনে করেন, ইউরোপীয় শিক্ষা ও ভাবধারার সংস্পর্শে বাঙালি সমাজ নতুনভাবে জীবনকে উপলব্ধি করতে শুরু করে। ’ (আমি নারী, তিন শ বছরের বাঙালি নারীর ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২০৬)

গবেষক শামসুল আলম লিখেছেন, ‘বাঙালি মুসলিমের আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সহজ, সরল, সাদাসিধা পোশাক পাঞ্জাবির আবেদন দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের প্যান্ট, শার্ট বাঙালি মুসলমানের দেহে দৃঢ় আসন গেড়ে বসে আছে। ’ (বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৮৭)

ড. গোলাম মুরশিদ লিখেন, ‘উনিশ শতক শেষ হওয়ার আগেই ইংরেজি শিক্ষিতদের মধ্যে পশ্চিমা পোশাক অথবা সে পোশাকের কিছু উপকরণ অনুপ্রবেশ করেছিল। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৪৭৩)

পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে নারীদের পোশাকেও। এ বিষয়ে মালেকা বেগম লিখেছেন, ‘বাঙালি নারীর পোশাকে আধুনিকতার স্পর্শ লাগে উনিশ শতকের ষাটের দশকে। তবে নারীর পোশাকের শোভনতা নিয়ে শিক্ষিত সমাজে আলোচনা ওঠার পর নারীরা সব ধরনের পোশাক পরতেই শুরু করে। আশির দশক থেকে নারীদের পোশাকে ইউরোপীয় ও দেশীয় ঢঙের অদ্ভুত মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। ’ (আমি নারী, পৃষ্ঠা ৮৯-৯১)

বর্তমানে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। ড. মুরশিদ মনে করেন, ‘শহরের শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে অসনাতনী (অবাঙালি) পোশাকের প্রচলন শুরু হলেও পা ও বুক যথেষ্ট ঢেকে রাখার রীতি বাঙালি সমাজে এখনো যথেষ্ট জোরালো। সে জন্য নামেমাত্র হলেও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে এখনো তাদের ওড়না পরতে হয়, তা সে ওড়নায় স্তন ঢাকুক, অথবা না-ই ঢাকুক। ট্রাউজার-টপ পরা মেয়েরা অবশ্য ওড়না পরে না। ’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ৪৮০)

বর্তমানের ফ্যাশন ডিজাইন, মডেলিং, স্টাইলিং, আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার জোয়ারে নারীরাও শার্ট, প্যান্ট, জিন্স, ফতুয়া, কাতুয়া, টি-শার্ট, গেঞ্জি, ওড়না ছাড়া উম্মুক্ত বক্ষ প্রদর্শন ও শর্ট কামিজ পরতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি কতটা বদলে গেল? নারীবাদী লেখিকা মালেকা বেগম লিখেন, আধুনিক নারীর প্রগতি দেখে অনেকে বিস্মিত, অনেকে উপমহাদেশীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে একে মেলাতে পারছেন না কিংবা কেউ কেউ একে জাতীয় ভাবধারার বিরোধী বলে মনে করছেন। (আমি নারী, পৃষ্ঠা ২০৭)

এভাবেই ব্রিটিশদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে বাঙালি শুধু মুসলমানিত্বকেই ছুড়ে ফেলেনি, বাঙালিত্বকেও বিসর্জন দিয়েছে।

পর্দা, শালীনতা ও আধুনিকতা

নগ্নতাই যদি সভ্যতা ও আধুনিকতা হয়, তাহলে আদিম প্রস্তরযুগের গুহাবাসীদের অসভ্য, বর্বর ও অনাধুনিক বলার যুক্তি নেই। কারণ তারা আরো বেশি বস্ত্রহীন ছিল। বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃত্ বেগম রোকেয়া নারীর পোশাক কেমন হওয়া চাই, এ বিষয়ে বলেন, ‘কেহ কেহ বোরকা ভারী বলিয়া আপত্তি করেন। কিন্তু তুলনায় দেখা গিয়াছে ইংরেজ মহিলাদের প্রকাণ্ড হ্যাট অপেক্ষা আমাদের বোরকা অধিক ভারী নহে। ’ (রোকেয়া রচনাবলি, পৃষ্ঠা ৫৭)

‘বোরকা’ প্রবন্ধের সব শেষে তিনি বলেন, ‘আশা করি, এখন আমাদের উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্তা ভগ্নিগণ বুঝিতে পারিয়াছেন যে, বোরকা জিনিসটা মোটের উপর মন্দ নহে। ’ (রোকেয়া রচনাবলি, পৃষ্ঠা ৬৩)

বাঙালি আধুনিক নারীরা শুধু তাদের রক্তের পূর্বসূরিদের পথ থেকেই সরে যায়নি, তারা তাদের আদর্শের পূর্বসূরি বেগম রোকেয়ার সঙ্গেও বেঈমানি করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দেশ প্রকাশ 24

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা/সংবাদ, ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।

Theme Customized By Shakil IT Park