কিন্তু কেন বাড়ছে চালের দাম ? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে চালের দামের ওপর। এছাড়া চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় মিলে চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। পাশাপাশি চাল মজুতের অভিযোগও পাওয়া গেছে মিলারদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা এখন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিনের বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সরকারের এ সংস্থাটিই জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, বর্তমানে বাজারে ৫৫ টাকা কেজির নিচে মোটা চাল নেই। যদিও বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। ৫৬/৫৭ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। দাম বেড়েছে মাঝারি মানের ও সরু চালের দামও। সবমিলিয়ে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সব ধরনের চালের কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাওরানবাজার ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের বাজার বেশ চড়া। মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫৭ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা আর সরু চাল মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৮ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে—মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শুধু মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও সরু চাল মিনিকেট/নাজিরশাইলের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বাড়ছে এটা একটা কারণ হলেও দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। কারণ, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৩২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে । এটকেই সুযোগ হিসেবে দেখছে কারসাজি চক্রটি। সূত্র জানিয়েছে, আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় চিন্তায় রয়েছে। সরকার এখন চাল আমদানি শুল্ক আরো কমানোর চিন্তা করছে। এজন্য গত ৭ আগস্ট চালের শুল্ককর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার একটি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে।
সূত্র বলেছে, যথেষ্ট পরিমাণে চাল আমদানি করা হলে বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হবে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া খোলাবাজারে (ওএমএস) বিক্রির জন্য চালের বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে।
Leave a Reply