1. admin@deshprokash24.com : Admin : Asraful Islam
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:৫০ অপরাহ্ন

যৌতুকের টাকা না পেয়েই আম্বিয়াকে হত্যাঃ র‌্যাব

  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

আব্দুল আল রাকিব, মানিকগঞ্জ .

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় ২১ বছর আগে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধূ আম্বিয়াকে আগুনে পুড়িয়ে  হত্যা করে তার স্বামী মো. আলম ।

রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজ্জাম্মেল হক এ তথ্য‌নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মামলার পর ২১ বছর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পলাতক ছিল আলম। তবে শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বংশাল এলাকায় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আলমকে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব জানায়, আলম ও আম্বিয়া একই গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার প্রায় ৩ মাস আগে ২০০১ সালের জুন মাসে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার আটিপাড়া গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের মেয়ে আম্বিয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আলমের। বিয়ের সময় আম্বিয়ার বাবা সামর্থ্য অনুযায়ী আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার দেয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার স্ত্রীকে মারধর করত। একপর্যায়ে আলমসহ আসামির বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজন স্ত্রীর পরিবারের কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। তার বাবা দরিদ্র হওয়ায় আলমের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় আলম আম্বিয়াকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আম্বিয়ার বাবা বিষয়টি জানতে পেরে ধার দেনা করে আলমকে ১০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু যৌতুকের বাকি টাকা পাওয়ার জন্য আলম নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ঘটনার ১০/১২ দিন আগে আলম আম্বিয়াকে মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এবং যৌতুকের ৪০ হাজার টাকা না নিয়ে আসলে তাকে বাড়িতে উঠতে দেবে না, বরং মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আলম আম্বিয়ার বাবার বাড়িতে এসে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে ফাঁকা রাস্তায় পৌঁছালে আলম আম্বিয়াকে চর, থাপ্পর, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। সে একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। তখন আলম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগ্রহ করে রাখা পেট্রোল তার গায়ে ঢেলে দিয়ে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আম্বিয়ার চিৎকার আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিভায় এবং গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় আম্বিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে সিংগাইরের সেবা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আম্বিয়া তার মা-বাবা ও ক্লিনিকে উপস্থিত ডাক্তার-নার্সদের কাছে জানিয়েছিলেন আলম তাকে মারধর করেছে এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রোগীর গুরুতর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ক্লিনিকের চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওই রাতেই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে আম্বিয়ার মৃত্যু হয়।

আম্নিয়ার বাবা মো. মকবুল হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আলমসহ তার বাবা মো. রহিজ উদ্দিন, মা আলেয়া বেগম, আলমের বোন জামাই রবিউল, আলমের চাচাতো নানা আফতাবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার পর থেকে আলম আত্মগোপনে ছিল। এজাহারনামীয় বাকি ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল ট্র্যাইবুনাল এর বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম আম্বিয়া হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ৩০/১১/২০০৩ তারিখ চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামী আলমকে মৃত্যুদন্ড সাজা প্রদান করেন।

পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্সের জন্য মামলা উচ্চ আদালতে গেলে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ গত ০৬/০৭/২০০৬ তারিখ আসামী আলম এর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় প্রদান করে।

উক্ত ঘটনার পর হতে আসামি আলম দীর্ঘ ২১ বছর পলাতক ছিলো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দেশ প্রকাশ 24

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা/সংবাদ, ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।

Theme Customized By Shakil IT Park