“ গান গাই আমার মোনরে বোঝাই মোন থাকে পাগল পাড়া; আর কিছু চায়না মোনে গান ছাড়া ! ”
আউল-বাউল-জারি-সারি-লালন-বিচ্ছেদ-ভাব-বৈঠকি গান গুলোই সাধন ভোজন; গানই আত্নার খোরাক।গান গেয়েই শ্রোতাদের আনন্দ দেয়া ও গানে গানেই মানবতার কল্যানের কথা বলাই তার নেশা।
বলছি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের চরমত্ত গ্রামের জালাল মিয়া ও মানিকজান দম্পত্যির ছেলে মানিক বাউলের কথা।তাকে কেউ বলেন মধুমাখা কণ্ঠের গায়ক। কেউ কেউ ‘কোকিলকণ্ঠ’ বলেও তাকে অভিহিত করে থাকেন। পরিবারের চার সন্তানের মাঝে বড় মানিক।৮ বছর বয়সে স্থানীয় ব্রাক স্কুলে হাতে খড়ি তার।তারপর মত্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যারয় এবং সর্বশেষ জাগীর উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরিবারে অভাব অনটনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্তই পড়াশোনার সৌভাগ্য হয় তার। সংসারের হাল ধরতে বাবার সাথে কৃষিকাজ শুরু করতে হয় তাকে।
মা মানিকজানের মুখে গান শুনে শুনে সে গান মুখস্ত করে নিজে নিজেই গুনগুনিয়ে গাইতো।স্থানীয় লোকজনও তার গান শুনে মুখরিত হতো সবসময়ই।বাংলাদেশ বেতারের একসময়ের নিয়মিত বাউল শিল্পী কদম আলী বয়াতীর কাছেই মানিকের সংগীতের হাতে খড়ি।
ছোট বেলা থেকেই মানিকগঞ্জের পরিচিত মুখ;বাউল কবি নূর মেহেদী আঃ রহমানের দরবারে আসা-যাওয়া করতো মানিক। ২০০৭ সালে বাউল রহমানের কাছেই বাইয়াত গ্রহণ করেন সে।বাউল রহমানের গান লেখা দেখা থেকেই মানিক নিজেও গান লিখার প্রতি আকৃষ্ট হয়।বাউল কবি নিজেও মাঝে মাঝে গান বলতো আর মানিককে দিয়ে তা ডায়রিতে লিখাতেন। তার পর থেকে মানিক নিজেই গান লেখা শুরু করেন এবং এ পর্যন্ত নিজেই প্রায় দেড়শত গান লিখেছেন ।
প্রসঙ্গত, মানিকের সংগীত জীবন শুরু হয় ২০০৮ সালের প্রথম দিকে। তখন বিভিন্ন বাউল,লালন,ভাব-বৈঠকি সহ নানা সামাজিক গানের অনুষ্ঠানে গান করতো সে। এমনকি ২০০৮ সালেই বিয়ে করেন তিনি।গান গেয়ে যা উপার্জিত হতো তা দিয়েই কোনরকমে সংসার চালাতেন মানিক।
২০১৫ সালে চলে যান ভারতের আজমির শরীফে।সেখানে ২ বছর অবস্থান করে ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন তিনি।
তারপর থেকে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে গান করে ভালোই চলছিলো মানিকের ।
কিন্তু ২০২০ সালে সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও আসে করোনা মহামারী।মহামারীতে সকল ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় গানের অনুষ্ঠানও আর হয়না। ফলে তার পর থেকে মিশুক গাড়ী চালিয়েই কোনরকম ভাবে সংসার চালাতে হচ্ছে এই গুণি মানুষটির।
এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মাঝে মাঝে করতে পারলেও তা আশানুরুপ নয় ।
মানিক বাউল ‘দেশ প্রকাশ 24’কে বলেন,“আমি অতি সাধারণ এক মানুষ ।আমি ছোট বেলা থেকেই গান ভালোবাসতাম । মায়ের কাছে গান শুনতাম,তারপর কদম আলী মামার কাছে গানের হাতে খড়ি । গান গেয়ে আমি আমার আত্নার খোড়াক পাই ;যা মানুষকেও দেয়ার চেষ্টা করি । করোনার পরে এখন আগের মতো গানের অনুষ্ঠান হয় না । লোকজ গান, বাউল গান এগুলো এদেশের ঐতিহ্য । দিন দিন এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে । আমাদের শিল্পিদের পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষেরই এই ঐতিহ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা জরুরী ।”
I love manik vai