ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে পুরো বিশ্বেই। জ্বালানিসহ নানা চাপে পড়ে কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি নিয়েছে অনেক দেশ। বাংলাদেশও সেই নীতিতে এরই মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ ও সরকারি কাজে যানবাহন না কেনাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো লোড শেডিং।
গ্রাহক পর্যায়ে আজ মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোড শেডিং করা হবে। পরে প্রয়োজনে তা বাড়িয়ে করা হবে দুই ঘণ্টা। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখা হবে। আর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আজ থেকে উৎপাদন স্থগিত থাকবে।
সচিবালয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, ভার্চুয়ালি অফিস ও সব ধরনের সভা করা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহারে সংযমী হওয়া, প্রতিদিন রাত ৮টায় শপিং মল বন্ধ করা এবং আলোকসজ্জা বন্ধ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছি। এতে মোটের ওপর আমাদের চাহিদার তুলনায় এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হবে। বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নীতি নিতে যাচ্ছে। আমরাও সে পন্থায় যেতে চাই। শিল্প এলাকায় গুরুত্ব দিয়ে লোড শেডিংয়ের পরিকল্পনা করা হবে। ’
জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি যানবাহনগুলো খুব হিসাব করে ব্যবহার করি, আমাদের সরকারি মিটিংগুলো যদি অনলাইনে করে ফেলি, তাহলে সাশ্রয় হবে। এরই মধ্যে আমরা এতে অভ্যস্ত। গত দুই বছর তো আমরা করেছি। ’ তিনি বলেন, রাত ৮টা থেকে কোনো রকম দোকানপাট, শপিং মলে আলোকসজ্জা করা যাবে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। যদি কেউ অমান্য করে, তাদের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অফিস কর্মঘণ্টার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সপ্তাহে এক দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘মসজিদে এসি একেবারে বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। শুধু নামাজের সময় ছাড়া বাকি সময় বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ’
এদিকে গতকাল সকালে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদিত হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাসসংকটেও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকার জন্য লোড শেডিংয়ের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।
‘কর্মঘণ্টাবিষয়েসিদ্ধান্তশিগগিরই’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিসের কর্মঘণ্টা কমানো হবে কি না বা বাসা থেকে অফিস করা হবে কি না—এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অফিসের সময় কমানো হতে পারে। অথবা হতে পারে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। অফিসে যতটুকু না করলেই নয়, এমনভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়টি চিন্তা করছি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে জানাব। মানুষের কষ্ট যাতে না হয় সেটা বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেউ বলছে অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা বা ৪টা পর্যন্ত করতে। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যেটি করলে ভালো হয় সেটিই করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নেব আমরা। সব বিষয় বিশ্লেষণ করে সঠিক কাজটি করার চেষ্টা করব। ’
Leave a Reply