সংলাপে যাচ্ছেনা বিএনপি, সিদ্ধান্ত নেয়নি বাম দলগুলো !
আপডেট সময় :
রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি.
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ রবিবার থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটি চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এতে নির্ধারিত কোনো আলোচ্যসূচি থাকছে না। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ নিবন্ধিত দলগুলোর একাংশ এই সংলাপে অংশ নেবে না বলে আগেই আভাস মিলছে।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, কমিশন এ সংলাপ থেকে কী অর্জন করতে চাচ্ছে, সেটিও স্পষ্ট নয়।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে থাকে। এ কমিশনও সেই ধারা অব্যাহত রাখছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিকে যেসব দলের সঙ্গে সংলাপ হবে, সেসব দলকে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাকি দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
নির্বাচন কমিশন থেকে আগেই জানানো হয়েছে, প্রতিটি দল থেকে ১০ জন করে প্রতিনিধি অংশ নিতে পারবেন। সংলাপে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্য দুই ঘণ্টা করে সময় রাখা হয়েছে। অন্য দলগুলো সময় পাবে এক ঘণ্টা করে।
এ সংলাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান বলেন, ‘কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা কী, তা জানার জন্যই এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা দলগুলোর বক্তব্য শুনব এবং আমরাও আমাদের মতামত জানাব। এ ধরনের সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপে যাঁরা আসবেন তাঁদের চাহিদার কথা যেমন জানব, তেমনি যাঁরা আসবেন না তাঁদের সঙ্গেও পরে আলোচনার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না। ’
* বিএনপিরঅবস্থান
‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন ছাড়া এখন অন্য কোনো আলোচনায় আগ্রহী নয় বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে দলটি। এ দলের জোটের শরিক ও জোটের বাইরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ইসির সংলাপের ব্যাপারে নিরুৎসাহ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যাব না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। গত দুই জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। ’
সংলাপে অংশ না নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কী অর্জন করতে চাইছে—এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে না গেলে সে নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় না। জনগণ সরকারের একতরফা নির্বাচনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ভোটকেন্দ্রে মানুষ যায় না। এতেই প্রমাণিত হয়, জনগণ আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ’
বিএনপির এই অবস্থান সম্পর্কে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় বলে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে তারা যাচ্ছে না।
* বামদলগুলোযাবলছে
নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গতকাল বলেন, সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টির ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমন্ত্রণপত্রে এজেন্ডা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এমনকি কোনো বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়নি। ’ আগে ইভিএম নিয়ে তাঁরা আলোচনায় অংশ না নিলেও এ ক্ষেত্রে কী হবে তা পার্টি ফোরামে আলোচনার আগে বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর ও ২০১১ সালের ২৭ জুন তারিখে তৎকালীন কমিশনের মতবিনিময়সভায় উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে এবং মৌখিকভাবে বেশ কিছু প্রস্তাব বাসদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। কমিশন বাসদের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছিল। পরে কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এবারের সংলাপে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
ইসির সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ইসির আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর পার্টির বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে সংলাপে অংশ নিয়ে পার্টির বক্তব্য তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১৯ কিংবা ২০ জুলাই তাঁদের দলের প্রধান চরমোনাই পীরের উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
* যেচারদলেরসঙ্গেসংলাপআজ
আজ কমিশনের সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট—বিএনএফ, বিকেল আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ—বিএমএলের সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারিত রয়েছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে আগামী ২০ জুলাই বিএনপি এবং ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের তারিখ রাখা হয়েছে।
* প্রথমসংলাপেযারাযোগদেয়নি
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ থেকে শুরু হওয়া সংলাপটি হচ্ছে দ্বিতীয় সংলাপ। এর আগে গত ১৯, ২১ ও ২৮ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। ওই সংলাপে ১১টি দল অংশ নেয়নি। দলগুলো হচ্ছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি—বিজেপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ—বিএমএল , বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি—সিপিবি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ।
এ ছাড়া এর আগে নতুন এ নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে অপারগতার কথা জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও এলডিপি। সংলাপ বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি, জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। অপারগতা ও বর্জনের কারণ হিসেবে দলগুলো জানায়, ২০১২ ও ২০১৬ সালের সংলাপে তাদের প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে নতুন করে বলার কিছু নেই।
* আগেরদুইনির্বাচনকমিশন যাকরেছে
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। এমনকি নির্বাচনী আইন সংস্কার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো মতামত গ্রহণের প্রয়োজন বোধ করেনি কাজী রকিবের কমিশন। ওই সময় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সংশোধিত আচরণ বিধিমালার খসড়া তৈরি করে কমিশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ এবং বিষয়টি সম্পর্কে রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।
এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে এম নুরুল হুদার কমিশন ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। কিন্তু দলগুলোর একাংশের অভিযোগ, সংলাপে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রস্তাবই আমলে নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে নুরুল হুদা কমিশন প্রকাশিত ‘নির্বাচনী সংলাপ-২০০৭’ প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে ওই কমিশনের বক্তব্য ছিল, ‘যেসব প্রস্তাবের সঙ্গে সাংবিধানিক প্রভিশন সংশোধন ও পরিবর্তন জড়িত, তা সরকার কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ও আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছে বিধায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কমিশন কর্তৃক সংবিধানের প্রভিশন পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু করণীয় আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। ’
Leave a Reply